দাদু ও হাডুডু

একদিন সকালে ক্লাস ফোর-এ পড়া তিতিন তার টেক্সটবুক থেকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু’র ব্যাপারে জানলো।

১৪ জন খেলোয়াড়ের এই খেলাটির ব্যাপারে জেনে তিতিনের আর তর সইলো না; বইটা হাতে নিয়েই সে দাদু ভাইয়ের কাছে ছুটে গেলো।

বললো, “দাদু ভাই, তুমি কি জানো আমাদের জাতীয় খেলার নাম কী?”

হাসতে হাসতে দাদু বললেন, “দাদু ভাই… আমি শুধু জানি-ই না, ছোটবেলায় আমি আমাদের জাতীয় খেলা, হাডুডু অনেক খেলেছি।”

তিতিন অবাক হয়ে দাদুর দিকে তাকিয়ে থাকলো। বললো, “তুমি খেলেছো, দাদু ভাই!! তাহলে আমরা কেনো খেলি না!?”

তিতিনের প্রশ্নে দাদু যেনো একটু অপ্রস্তুত হলেন। কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “এখন তো আর সেই সময় নাই, দাদু। একবার কী হয়েছিল, জানো?”

চোখে ভরা বিস্ময় নিয়ে তিতিন জানতে চাইলো, “কী হয়েছিল দাদু?!”

তখন আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে। লেটার মার্ক পেয়ে পাস করেছি। কলেজের ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে আর মাথাতেও কোনো চিন্তা নাই তাই ভাবলাম, হাডুডু খেলা শিখি।

কিন্তু আমি অনেক রোগা ছিলাম বলে কেউ আমাকে হাডুডু দলে নিতে রাজি হচ্ছিল না।

এমন সময় আমার বাবা আমাকে পাশের গ্রামের আনন্দ মেলায় নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে এক কাকুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

বাবা কাকুকে বললেন, “বড় ভাই, আজক্যা আপনাদের টুর্নামেন্ট কখন?”

কাকু হেসে বললেন, “একটু দেরি করে ফালাইসো, মহসিন। একটু আগেই শেষ হইয়া গ্যাছে।”

বাবা বললেন, “আহহা!! আচ্ছা বড় ভাই, এইডা আমার ছোট ছাওয়াল, ওরে আপনাদের দলে নিতে হইবে। ওরে হাডুডু শিখাইতে হইবে।”

উৎফুল্ল হয়ে কাকু বললেন, “আরে মহসিন, এইডা কুনু ব্যাপার!! কাল থেইক্যাই ওরে পাঠাইয়া দাও, ওরে টুর্নামেন্টের জন্য তৈরি কইরা লইবো, তুমি চিন্তাই কইরো না।”

এই থেকে আমার হাডুডু খেলা শুরু। জানো দাদু ভাই?

“হাডুডু” বলতে বলতে প্রতিপক্ষকে ঘেরাও করা এবং হাজার বাধা সত্ত্বেও দম ধরে রেখে প্রতিপক্ষের ডেরা থেকে পালিয়ে আসার এই খেলাটা এক সপ্তাহ খেলতেই আমি নিজেকে নতুন ভাবে চিনলাম।

এক সপ্তাহেই আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলাম, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে শিখলাম… তার চেয়েও বড় কথা, আমি আমার লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই করতে শিখলাম।

এরপর থেকে লড়াই করতে আর কখনোই আমি হাঁপিয়ে উঠিনি।”

দাদুর কথা শুনে তিতিন কী বুঝলো, জানিনা। কিন্তু খুশিতে তার চোখ চকচক করে উঠলো। গদগদ কণ্ঠে সে বললো, “দাদু, আমিও হাডুডু খেলতে চাই।”

তিতিনের কথায় সম্মতি জানিয়ে দাদু বললেন, এইবার গ্রামে গেলে সবাই মিলে একসাথে আমরা হাডুডু খেলব, দাদু ভাই। তুমি এখন দ্রুত পড়া শেষ করে নাও।”

তিতিন দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আবার পড়তে বসলো।