নৌকা বাইচ

ভোর থেকেই গলুইপুর গ্রামে চাঞ্চল্য শুরু হয়ে গেছে। আজ গলুইপুরে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হবে। এই প্রতিযোগীতা দেখার জন্য টুনি ও তার বন্ধুরা নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছে।

টুনি বলল, “আজকে আমাদের গ্রাম থেকে যেই নৌকা জিতবে, সেই নৌকা দল একটা সুন্দর পুরস্কার পাবে।”

পাখির মতো দেখতে কতকগুলো লম্বা লম্বা (১৫০-২০০ ফুট) ছিপ নৌকা নদীতে ভেসে আছে। নৌকাগুলোর গলুইয়ে ময়ূরের মুখ অথবা রাজহাঁসের মুখ নতুবা পাখির ঠোঁটের অবয়ব তৈরি করা।

হাতে লম্বা লম্বা দাঁড় নিয়ে কোনো নৌকায় ৭ জন, কোনোটায় ২৫ জন, কোনোটাতে আবার ৫০ জন শক্তিশালী মাঝি বসে আছে।

এবারের নৌকা বাইচে একটাও ১০০ জন মাঝির নৌকা দেখা যাচ্ছে না। মাঝিরা সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে “এক… দুই… তিন… শুরু!” বলে নৌকা বাইচ শুরু করলো।

এরপর সবাই মিলে একসঙ্গে, একই তালে দাঁড় বাইতে শুরু করলো। এভাবে তাদের ৬৫০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।

টুনি ও তার বন্ধুরা নদীর পাশে দাঁড়িয়ে উল্লাস করছে। “দেখো, ময়ূর নৌকাটা কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে!” ময়ূরের মুখের অবয়বের নৌকাটা দেখিয়ে টুনি বলল।

ওদিকে পাখির ঠোঁট নৌকাটিও খুব দ্রুত চলছে। প্রায় প্রতিটি নৌকার মাঝিরা সমসুরে জারি গান গাইছে এবং গানের তালে তালে দাঁড় বাইছে।

যা বোঝা যাচ্ছে, ময়ূর অথবা রাজহাঁস জিতবে। তারাই সবচেয়ে এগিয়ে। কখনো রাজহাঁস ময়ূরকে পিছে ফেলে দিচ্ছে, আবার কখনো ময়ূর এগিয়ে যাচ্ছে।

অবশেষে, ময়ূর জিতলো। ময়ূরের সমর্থক ও মাঝিরা উল্লাসে ফেটে পড়লো। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে টুনি ও তার বন্ধুরা বাসায় ফিরে গেলো।

পরদিন স্কুলে টুনির শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কালকে কে কে নৌকা বাইচ দেখেছো?”

প্রায় পুরো ক্লাস হাত তুলে শিক্ষককে জানালো, তারা নৌকা বাইচ দেখেছে। শিক্ষক সকলের উদ্দেশ্যে বললে, “কাল নৌকা বাইচ দেখে তোমরা কী শিখেছো?”

বল্টু বললো, “নৌকা বাইচ আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি মজার খেলা।”

শিক্ষক বললেন, “হ্যাঁ, বল্টু। তুমি ঠিক বলেছো। এছাড়াও এখানে আরো একটি শিক্ষা আছে।

নৌকা বাইচ আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করার শিক্ষা দেয়। মাঝিরা একসাথে দাঁড় না বেয়ে যদি এলোমেলোভাবে দাঁড় বাইত তাহলে কিন্তু নৌকাটা ঠিকভাবে এগোতো না।”

টুনি অবাক হয়ে বললো, “তাই তো! একসঙ্গে কাজ করলে তো আমরা অনেক কিছু করতে পারি!”

“তাহলে এখন থেকে আমরা…”, শিক্ষকের কথা শেষ না হতেই পুরো ক্লাস একসাথে বলে উঠলো, “মিলেমিশে কাজ করব। বন্ধুর বিপদে সকলে একসাথে এগিয়ে যাব।”