পাথরের স্যুপ

একদিন মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একটি নতুন গ্রামে গেলেন যেখানে তাকে কেউ চিনত না।

হোজ্জা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলেন। আশেপাশে কোনো খাবার না পেয়ে তিনি গ্রামের এক লোকের বাসায় কড়া নাড়লেন এবং কিছু খাবার চাইলেন।

গ্রামবাসীরা অচেনা লোকদের সন্দেহ করত তাই লোকটি হোজ্জাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করল এবং দরজা বন্ধ করে দিল।

নিরুৎসাহিত না হয়ে হোজ্জা রাস্তা থেকে একটি বড় পাথর তুললেন। সেটি একটি হাঁড়িতে রেখে গ্রামবাসীদের বাড়ির সামনে হাঁড়িতে জ্বাল দিতে শুরু করলেন।

কৌতূহলী গ্রামবাসী দরজা খুলে খুলে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “এ তুমি কী করছো?”

হোজ্জা হেসে উত্তর দিলেন, “আমি পাথরের স্যুপ বানাচ্ছি! এটা বেশ সুস্বাদু, তবে এতে যদি একটু লবণ দাও তাহলে আরও ভালো লাগবে।”

আগ্রহ নিয়ে গ্রামবাসী কিছু লবণ এনে দিল। হোজ্জা হাঁড়িতে লবণ দিলেন। স্যুপটি চেখে হোজ্জা বললেন, “আহ, রান্না ভালো হচ্ছে। তবে একটু সবজি হলে আরও ভালো হতো।”

পাথরের স্যুপ কেমন হয় তা জানতে আগ্রহী গ্রামবাসী হোজ্জাকে কিছু সবজি এনে দিল। স্যুপে সবজি দিয়ে হোজ্জা নাড়তে লাগলেন।

“দারুণ!” হোজ্জা বললেন, “যদি একটু মাংস যোগ করা যেত তাহলে এটা একেবারে অসাধারণ হতো।”

গ্রামবাসী উৎসাহিত হয়ে এবার কিছু মাংস এনে দিল। সেগুলোও হোজ্জা স্যুপে দিলেন। একটু পরে স্যুপটি তৈরি হয়ে গেলো।

হোজ্জা গ্রামবাসীর সাথে স্যুপটি ভাগ করে খেলেন। এত সুস্বাদু স্যুপ গ্রামবাসী আগে কখনো খায়নি। খাওয়া শেষে তারা হোজ্জাকে জিজ্ঞেস করল, “পাথরটির কী হলো?”

হোজ্জা হাঁড়ি থেকে পাথরটি বের করে বললেন, “ওহ, পাথরটি এখানেই আছে। শুধুমাত্র স্যুপ বানানোর জন্য আমি পাথরটি ব্যবহার করেছিলাম। তোমাদের দেওয়া উপকরণগুলো মূলত স্যুপটির স্বাদ বৃদ্ধি করেছে।”

হোজ্জা কতটা বুদ্ধিমত্তার সাথে শুধুমাত্র একটি সাধারণ পাথর ব্যবহার করে একটি জমকালো ভোজের ব্যবস্থা করেছেন তা দেখে গ্রামবাসী হেসে উঠল।

হোজ্জার উদারতা গ্রামবাসীকে আরও অতিথিপরায়ণ হতে উৎসাহিত করল এবং সেই দিন থেকে তারা অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ হয়ে উঠল।