উইল

অনেক অনেক দিন আগেকার কথা। এক ভদ্রলোক তিনটি মেয়ে রেখে মারা গেছিলেন। ভদ্রলোকের তিনটি মেয়ে তিন রকমের ছিল।

একটি খুব সুন্দরী আর বিলাসিনী, আর একটি ছিল মিতব্যয়ী আর কঠোর পরিশ্রমী। ক্ষেত খামার নিয়েই সে মাথা ঘামায় তাছাড়া ভাল সুতোও কাটে। তৃতীয় মেয়েটি ছিল বিকলাঙ্গ এবং কুরূপা৷

ভদ্রলোক মারা যাবার আগে একটা উইল করে গেছিলেন। সে উইলে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ট্রাস্টি নিযুক্ত করে তাঁর সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি তিন মেয়েকেই সমান ভাগে ভাগ করে দিতে বলে গেলেন।

কিন্তু উইলে একটা শর্ত ছিল। যে ধনসম্পদ তারা পাবে তা কিন্তু তারা কেউই ভোগ করতে পারবে না। শুধু তাই-ই নয়, ভোগ না করলে আবার প্রত্যেককেই এক হাজার পাউণ্ড করে দিতে হবে তাদের মাকে।

এই অদ্ভুত উইলের খবর সারা এথেন্সে ছড়িয়ে পড়ল। ভদ্রলোকের স্ত্রী ছুটলেন বড় বড় আইনজীবীদের কাছে উইলের রহস্য উদঘাটন করতে।

তাঁরা অনেক মাথা ঘামিয়েও বের করতে পারলেন না যে, এ কি করে সম্ভব? মেয়েরা সম্পত্তির যে ভাগ পাবে, তা তারা ভোগ করতে পারবে না!

অথচ আবার এই না ভোগ করতে পারার জন্যে এক হাজার পাউন্ড দিতে হবে। আর এই অর্থই বা তাদের তখন আসবে কোত্থেকে?

বহুদিন ধরে বহু চেষ্টা করেও যখন এ ব্যাপারের কোনো কূল কিনারা মিললো না তখন ভদ্রলোকের বিধবা স্ত্রী আইনের ধার না ধেরে নিজের বিবেক বুদ্ধি মত সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থা তিনি নিজেই ঠিক করলেন।

তিনি ঠিক করলেন—সুন্দরী বিলাসিনী মেয়েটাকে ভাল পোশাক আশাক, গয়নাপত্র, সৌখিন জিনিস যা আছে সে সবই দেবেন, তার সঙ্গে দেবেন বান্দা, আর বাঁদী।

খাটিয়ে মেয়েটাকে দেবেন তিনি ক্ষেত-খামার, গোলাবাড়ি, পশুপাল, আর চাষ-বাসের জন্যে যা কিছু লাগে— কলি-কামিন-মজুর ইত্যাদি।

আর বিকলাঙ্গ মেয়েটাকে দেবেন তিনি থাকবার জন্যে একটা সুন্দর বাড়ি। তার সঙ্গে লাগোয়া চমৎকার একটা বাগান। আর দেবেন বড়সড় একটা ভাঁড়ার ঘর যেখানে ভাল ভাল খাবার জিনিস আর মদ সাজানো থাকবে।

এইরকম ভাবে সবকিছু ঠিকঠাক করে একদিন বিধবা স্ত্রী লোকজন ডেকে তাদের সামনে তিন মেয়েকে যখন এইসব দিতে যাচ্ছেন আর লোকজনও সব তার বাটোয়ারার তারিফ করছে তখন কোত্থেকে খবর পেয়ে সেখানে হঠাৎ ঈশপ হাজির হল।

তিনি সবকিছু শুনে বললেন, “এই মেয়ে তিনটির বাবা যদি জানতেন যে, এথেন্সের লোকগুলির মাথায় এমনই গোবর পোরা যে তারা কেউই তাঁর উইল-এর মর্ম উদ্‌ঘাটন করতে পারবে না, তাহলে তিনি বিরক্ত হয়ে তাঁর কবরের ভিতরেই পাশ ফিরতেন।”

ঈশপের এই কথা শুনে সকলেই তখন তাঁকে ধরে বসল, “তাহ’লে আপনিই বলুন, কি করে এই উইলের সমস্যার সমাধান হয়৷”

ঈশপ তখন বললেন, “শুনুন কি করে এর সমাধান হয়। আসবাবপত্র সমেত ভাঁড়ার ঘর ইত্যাদি ঐ খাটিয়ে মেয়েটাকে দেওয়া হোক্।

ভাল জামাকাপড় মণিমুক্তো, বিলাস দ্রব্য আর বান্দা বাঁদি দেওয়া হোক ঐ বিকলাঙ্গটিকে, আর চাষের জমি-জমা যন্ত্রপাতি, পশুর পাল, রাখাল, মজুর ইত্যাদি দেওয়া হোক সুন্দরী বিলাসিনী মেয়েকে।

এই ব্যবস্থা হলে কেউই তার নিজের নিজের সম্পত্তি রাখতে চাইবে না। ব্যবহারও করতে চাইবে না। বিকলাঙ্গ সৌখিন জিনিস বিক্রি করে মদ কিনতে চাইবে।

খাটিয়ে চাষী মেয়েটি সুন্দর সাজানো বাড়ি, বাগান দিয়ে কি করবে? চাই তার চাষের জমি, চাষের সরঞ্জাম আর মজুর।

বিলাসিনীর জমি-জমা চাষের সরঞ্জামের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবল তার ভাল ভাল সাজগোজ। সুতরাং তাদের বাবার ইচ্ছেমত সম্পত্তির ভাগ পেয়ে তারা তা ভোগ করতে পারল না।

বিক্রি করে দিল এবং বিক্রির ফলে তাদের বাবার নির্দেশ মত তাদের মাকে প্রত্যেকেই এক হাজার পাউন্ড করে দিল।

উপদেশ: অল্প মেধার অসংখ্য লোক যে সমস্যার সমাধান খুঁজে পায় না, একজন বিচক্ষণ, বিজ্ঞ লোক অতি সহজেই তার রহস্য ভেদ করতে পারেন।