একদা এক ধনী ভদ্রলোক ছিল। তাঁর যেমন ধন-সম্পত্তি ছিল ঠিক তেমনি তিনি জনসাধারণের বিনোদনের জন্যে প্রচুর অর্থ খরচ করতেন। প্রতি বৎসরই তিনি নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।
একদিন সেই ধনী ব্যক্তিটি লোক দিয়ে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিলেন যে—
এবার তিনি এমন সব তাজ্জব ও অদ্ভুত জিনিস দেখাবার ব্যবস্থা করেছেন যে, যা এর আগে কেউ দেখেনি। আর এই অদ্ভুত মজার অনুষ্ঠানে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যে সবচেয়ে অদ্ভুত ও মজার কিছু দেখাতে পারবে তাকে প্রচুর পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হবে।
এই ঘোষণা শুনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অপেশাদার ও পেশাদার প্রচুর মানুষ এল। তাদের ইচ্ছে অপরকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে নাম কিনবে।
একজন বিখ্যাত হাস্যকৌতুককারী হরবোলাও এলো এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে। সে এসে বলল, এমন খেলা সে দেখাবে যে, সেরকমটা এর আগে আর কেউ কখনও দেখেনি।
প্রতিযোগিতা শুরু হল। সেই অনুষ্ঠানে এত লোকের সমাগম হয়েছিল যে তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না। অনুষ্ঠান শুরু হতেই চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
সেই হাস্যকৌতুককারী হরবোলাটি হঠাৎ রঙ্গমঞ্চে উঠে তার মাথাটা নিচু করে উপরকার জামার ভাঁজের মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে এমন শব্দ করতে লাগল যে, শুনে সকলেরই মনে হল ঠিক যেন একটা বিড়াল বাচ্চা মিউ মিউ করছে।
সকলেই তখন এক বাক্যে বলে উঠল, এটা ওর চালাকি। ও নিশ্চয়ই ওর পোশাকের মধ্যে বিড়াল বাচ্চা লুকিয়ে রেখেছে—এ যে সত্যিকারের বিড়াল বাচ্চার ডাক।
অতএব দর্শকদের অনুরোধে তারা সারা শরীরে তল্লাশি চালানো হল। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কিছু পাওয়া গেল না তার পোশাকের ভেতর থেকে।
দর্শকদের মধ্যে একটি চালাক লোক ছিল। সে অমনি বলে উঠল, “এ আর কি, এর চেয়ে আমি আরও অনেক ভাল পারি।
আপনারা অনুমতি দিলে কালই—উনিও আসুন, আমিও প্রস্তুত হয়ে আসব। দেখবেন কার ডাক আসল বিড়াল ছানার মত।”
অতএব তাই-ই স্থির হল। পরদিন একেবারে ভেঙে পড়ল লোক। যথাসময়ে দুই প্রতিযোগীই মঞ্চে হাজির।
সেই হরবোলাটিই প্রথম বাচ্চা বিড়ালের ডাক শোনাল। আর চারদিক তখন করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল। এরপর সেই চালাক লোকটির পালা।
মঞ্চের সামনে সে এগিয়ে এসে তার হাত দু’টো জামার ওপর এমনভাবে ধরল যে, দেখে মনে হল জামার তলায় বুঝি সে কোনো বিড়াল ছানা লুকিয়ে রেখেছে।
আগের দিন ঐ হরবোলা ভদ্রলোকটির জামাকাপড় খুঁজে যখন কিছু পাওয়া যায় নি তখন দর্শকরা মনে করল—এ লোকটারও এটা স্রেফ ভাঁওতা।
কিন্তু সে সত্যি সত্যিই জামার তলায় বিড়াল বাচ্চা লুকিয়ে এনেছিল। বাচ্চাটার পেটে চাপ দিতেই বিড়াল ছানাটা যন্ত্রণায় মিউ মিউ করে মৃদু শব্দে ডেকে উঠল। কিন্তু দর্শকরা হাততালি দিল না।
সবাই বলতে লাগল এর চেয়ে হাস্যকৌতুককারীর ডাকই যেন বেশি আসলের মত শোনাল। এই শুনে চালাক অথচ বুদ্ধু লোকটা আর রাগ সামলাতে পারল না।
সে রেগেমেগে জামার তলা থেকে বিড়াল ছানাটিকে বার করে সবাইকে দেখিয়ে বলল, “এই দেখো,—তবুও বলছ তোমরা ওর ডাক আসলের মত।”
উপদেশ: বদ্ধমূল ধারণা বদলানো কঠিন।