কানামাছি ভোঁ-ভোঁ

একদিন গোপাল ও তার বন্ধু রাস্তা দিয়ে তিন গাঁয়ে যাচ্ছিল। যেতে যেতে দেখতে পেল একটা মিষ্টির দোকানে থালায়-থালায় থরে ধরে মিষ্টি সাজানো আছে। মিষ্টি দেখেই দুজনের জিভে জল এসে গেল৷

দু’জন পকেট হাতড়িয়ে দেখে মিষ্টি খাবার মত পয়সা পকেটে নেই। কিন্তু মিষ্টি না চেখে চলে যেতে তাদের পা উঠছেনা।

তারা দুজনেই লোভ সামলাতে পারলে না। সঙ্গে পয়সা না থাকলেও গোপাল ও গোপালের বন্ধু পোশাক- পরিচ্ছদের দিক থেকে বেশ পরিপাটিই ছিল। দেখে বেশ বনেদী পয়সাওয়ালা ঘরের মনে হচ্ছিল।

তখন ভর দুপুর। দোকানী ছাড়া আর কেউ ছিল না। গোপাল আর গোপালের বন্ধু আগে থেকে মতলব এঁটে নিয়ে দোকানে ঢুকে পড়ল।

দু’জনেই বেশ পেটপুরে যা ইচ্ছা সব রকম মিষ্টিই খেয়ে নিল। জাঁদরেল খদ্দের ভেবে দোকানী একটু একটু করে কৃতার্থের হাসি হাসে।

দোকানদার যখন দাম চাইলে, তখন গোপাল বললে, “আমি দিচ্ছি। কত দাম হয়েছে তোমার?”

গোপালের বন্ধুটি বললে, “না, আমি দিচ্ছি, কত দাম বল।” দু’জনের মধ্যে দাম দেওয়া নিয়ে দস্তুরমতো রেষারেষি শুরু হয়ে গেল। গোপাল দাম দিতে যায়, তার বন্ধুটি বাধা দেয়।

বন্ধুটি দাম দিতে এগোয়, গোপাল বাধা দেয়। না তুমি দেবে না, আমি দেব—এই বলে দুজনের মধ্যে কে আগে দেখে এই মনোভাব যেন। দোকানী এই সব দেখে হেসে লুটোপুটি।

পরিশেষে, গোপাল দোকানীকে বললে, “মশাই, আপনার কাঁধের গামছাখানা দিয়ে আপনার চোখ বেঁধে দিচ্ছি।

আপনি চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের দু’জনের মধ্যে যাকে প্রথমে এসে ধরবেন— সে-ই খাবারের দাম দেবে। বলুন রাজী আছেন?”

দোকানী গোপালের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল ৷ গোপাল দোকানীর কাঁধের গামছাখানা দিয়ে তার চোখ দুটোকে কষে বেঁধে দিলে।

তারপর গোপাল আর গোপালের বন্ধু তাড়াতাড়ি দোকান থেকে আরও কিছু মিষ্টি তাদেরই জায়গায় বেঁধে নিয়ে কেটে পড়ল।

দোকানী দু’হাতে এদিক-ওদিক করে যেতে লাগল। বেশ কিছুদূর চলে আসার পর গোপালের বন্ধুটি গোপালকে বলল, “অনেকদিন পরে বেশ কানামাছি খেললে তো।”

বন্ধুর কথা শুনে মুচকি গোপাল হেসে বললে, “আমি আর কানামাছি খেললুম কোথায়? দোকানী ব্যাটা এখনও বোধ হয় খেলছে।”

তারপর দু’জনে হাসতে হাসতে জোরে জোরে পা চালিয়ে পগারপার। যদি দোকানী পেছনে এসে পড়ে।